বাবরি মসজিদ ভাংগা সেই বলবীরের কি পরিণতি হয়েছিলো?

একটা সময় তার মনে ছিলো মুসলমানদের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ আর প্রবল ঘৃণা। বলবীর সিং ছিলেন হিন্দু ধর্মান্ধ জনতার একজন। যারা ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর ১৬ সতকে নির্মিত বাবরি মসজিদ ধংস করেছিলো।



বাবরি মসজিদ ভাংগা সেই বলবীরের কি পরিণতি হয়েছিলো?


বলবীর সিং-ই ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি কেন্দ্রীয় গম্বুজের উপরে পৌছান। তার হাতে ছিলো একটা হাতুরি। এমনকি মসজিদ ভেংগে ফেলার পর তিনি একটি ইটও নিয়ে গিয়েছিলেন। এই ইট কে তিনি মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রশমিত করার জন্য একটি স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন। মসজিদটি ধ্বংস করার পর পরই বলবীর সিং এবং তার বন্ধু যোগেন্দ্র পাল গভীর আত্ম দংশনে মগ্ন হন। ছয়মাস পর তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। বলবীর সিং যিনি এখন মোহাম্মাদ আমীর নামে পরিচিত। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে ১০০ টি মসজিদ নির্মাণের শপথ করেছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি একানব্বই টি মসদিদ নির্মাণ বা সংস্কার করেছেন। 


একটি এজেন্সির সাথে কথা বলার সময় বলবীর  সিং বলেছিলেন তিনি মসজিদটি ভাংগার জন্য উৎসাহী ছিলেন। তখন তিনি মুসলমানদের প্রতি ঘৃণায় উন্মাদ ছিলেন। তিনি বলেন আমি বাবরি মসজিদের যায়গায় রামের নামে মন্দির তৈরী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ভুল বুঝতে পেরে আমি ১০০ টি মসজিদ নির্মাণ করে আমার পাপ ধুয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। হিন্দু কট্টরপন্থী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দল শিবসেনার সদস্য ছিলেন সিং। তিনি জানান তিনি রাজধানী দিল্লি সংলগ্ন হরিয়ানা রাজ্যের পানিপথ শহরে নিয়মিত আরএসএস মহড়া এবং প্রশিক্ষণ প্রোগ্রামে যোগ দিতেন। সিং বলেছিলেন  মসজিদ ধ্বংসের পর পরই তার মাঝে আত্ম উপলব্ধি হয়। পরেই তিনি যোগেন্দ্র পালের মাধ্যমে মাওলানা করিম সিদ্দিকীর সংস্পর্শে আসেন। তার আচরণ এবং বুঝার উপায় বলবীর সিং কে আত্ম অনুসন্ধানের দিকে পরিচালিত করে। ১৯৯৩ সালের ১ জুন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। 


বলবীর সিং পানিপথের কাছে একটি ছোট গ্রামে হিন্দু রাজপুত পরিবারে জন্মগ্রহণ জরেন। তার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক। যিনি মহাত্মা গান্ধীর দর্শণে অনুপ্রাণিত ছিলেন। সিং বলেছেন তার বাবা ভারতের স্বাধীনতার পর পরই রক্তপাত এবং বড় আকারের সহিংসতায় বিরক্ত হয়ে ছিলেন এবং এলাকার মুসলমানদের সাহায্য করার জন্য তার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। 


১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বরের দুর্ভাগ্যজনক দিনটির কথা স্বরণ করে বলবীর বলেছিলেন সারা ভারতের বড় হওয়া হিন্দু স্বেচ্ছাসেবকরা ভয় পেয়েছিলেন যে সরকার মসজিদ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে পারে। মসজিদের আসেপাশে কোনো কার্যকর নিরাপত্তা ছিল না এবং এটি মানুষকে উৎসাহিত করেছিল। মসজিদ ধ্বংস করার পর তারা ফিরে এলে তাদেরকে নায়কের মতো স্বাগত জানানো হয়েছিল। কিন্তু বলবীর সিং যখন বাড়িতে পৌছেন তার পরিবারের প্রতিক্রিয়া তাকে হতবাক করে। প্রচন্ড নিন্দা করে পরিবারের সদস্যরা। তার সব উচ্ছাস উবে যায়। বাড়িতে যায়গা হয় না তার। 


সিং বলেছেন একসময় সবার ধারণা হয়েছিলো তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছেন। অবশেষে তিনি মনকে শান্তি দিতে ইসলাম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। এইভাবেই বলবীর সিং হয়ে যান মোহাম্মদ আমির। ২০২১ সালে তিনি মারা যান। আর মাত্র নয়টি মসজিদ নির্মাণ করলেই একশটি মসজিদ তৈরীর সংকল্প পূরণ হয়ে যেত তার।  

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন