ইহুদী সম্প্রদায় জনসংখ্যায় অন্যান্য সম্ল্রদায়ের চেয়ে অনেক কম হওয়া সত্যেও পুরো বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, ব্যবসা-বানিজ্য ও গণমাধ্যমে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।
সারা পৃথিবীতে তাদের জনসংখ্যা মাত্র দেড় কোটি। অথচ এই দেড় কোটি জনসংখ্যার সম্প্রদায় দেড়শ কোটি মুসলিম সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের চেয়ে এগিয়ে। দুনিয়ার যত বাঘা বাঘা বহুজাতিক কোম্পানি ও আইটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে অধিকাংশের মালিকানায় ইহুদীদের দখলে। এমনকি ইউরোপ আমেরিকার রাজনীতিতেও রয়েছে ইহুদীদের প্রচ্ছন্ন হস্তক্ষেপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মত ক্ষমতাধর রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরাও ইহুদীদেরকে সমীহ করে চলেন এবং ইসরাইল সফর করে তাদের আশীর্বাদ নিয়ে আসেন। শুনতে অবাক লাগলেও এটা একবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতা।
প্রশ্ন হচ্ছে দেড় কোটি জনসংখ্যার এই ইহুদীদের এত ক্ষমতার উৎস কি? তাদের এই সফলতার পেছনে যতগুলো কারণ রয়েছে তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ইহুদী বাচ্চাদের পরিকল্পিত ও পরিপূর্ণ মেধার বিকাশ। ইহুদীরা তাদের শিশুদেরকে অত্যন্ত সচেতনভাবে ও পরিকল্পিতভাবে মেধাবী হিসেবে গড়ে তোলে। আর এই পরিচর্যার শুরু হয় একেবারে গর্ভকালীন সময় থেকে। ইহুদীরা তাদের বাচ্চাদের মেধা বিকাশে কি কি কাজ করে থাকে, কিভাবে প্রতিটি ইহুদী শিশু বুদ্ধিমান ও মেধাবী হিসেবে বেড়ে উঠে এব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা থাকবে আজকের পর্বে।
ইহুদী শিশুদের বুদ্ধিমত্তা তাদের জন্মের আগে থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়। একজন ইহুদী নারীকে গর্ভধারণ করার আগেই তার ওজন, বয়স এবং বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা করে তাকে প্রস্তুত করা হয়। পিরিয়ডের দশ দিন পর তাকে তার স্বামীর সাথে নব দম্পতির ন্যায় চার থেকে পাচঁদিন সময় কাটানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এসময় তারা যেন হাসিখুশি থাকে এবং তাদের পছন্দের খাবার পায় সেদিকে লক্ষ রাখা হয়। তাদের পছন্দের ফুল ও রঙ দিয়ে ঘর সাজানো হয়।
একজন ইহুদী নারী গর্ভধারণের প্রথম মাস থেকেই তাকে নির্বাচিত ডাক্তারদের বিশেষ পরিচর্যায় রাখা হয়। এসময় মাকে জটিল জটিল সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে দেওয়া হয়। তাছাড়াও তাকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়তে দেওয়া হয়। টেলিভিশন অথবা কম্পিউটারে সামনে বসে সময় নষ্ট না করে বরং বই পড়ে এসময় ইহুদী মায়েরা সময় পার করেন। তারা বিশ্বাস করেন গাণিতিক সমস্যার সমাধান ও বিজ্ঞানের বই পাঠ গর্ভের সন্তানের মেধা বিকাশে প্রভাব ফেলে এবং তারা গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী হয়ে জন্ম গ্রহণ করে। গর্ভকালীন সময়ে ইহুদী নারীদেরকে বিভিন্ন ভিডিও গেমস হিসেবে পাচঁ থেকে সাত বছর বয়সের শিশুদের উপযোগী গেমস খেলতে দেওয়া হয়।
গর্ভকালের পাচঁ মাস থেকে তাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক অডিও শুনতে দেওয়া হয়। শরীর, মন ও মস্তিষ্ক যেন ফুরফুরে থাকে সেজন্য ভায়োলিন, পিয়ানো সহ রিলাক্সেশন মিউজিক শুনানো হয়। মস্তিষ্কে কোন ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি করে এমন কোনো কথা বা ঘটনা তার সামনে বলা নিষেধ করা হয়। তাকে এমন কোনো সিনেমা বা গান শুনানো হয় না যা জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাথে সম্পৃক্ত নয়।
গর্ভকালে শিশুর মেধার বিকাশের জন্য ইহুদী নারীরা সুনির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন। তারা আলমন্ড, খেজুর আর দুধ খেতে পছন্দ করেন। দুপুরের খাবারের তালিকায় থাকে রুটি এবং মাথা ছাড়া মাছ, খেজুর আর বাদাম যুক্ত সালাদ। তারা বিশ্বাস করে যে মাছ মস্তিষ্কে পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে এসময় তারা মাংস পরিত্যাগ করে। তাদের বিশ্বাস মতে মাছ ও মাংস একসাথে খেলে শরীরের কোনো উপকারে আসে না। অন্য দিকে যেকোনো প্রধান আহারের আগে গর্ভবতী ইহুদী নারীরা ফল খেয়ে থাকেন। আর এত কিছুর আয়োজন শুধুমাত্র গর্ভে থাকা শিশুটির সঠিক শারীরিক ও মানসিক বিকাশের দিকে নজর রেখে।
ইসরাইলে প্রকাশ্যে ধূমপান করা নিষিদ্ধ। তাদের বাসার ভিতর বিশেষ করে যে ঘরে শিশু বা গর্ভবতী নারী রয়েছে সেখানে ধূমপান করা একেবারেই নিষিদ্ধ। এমনকি মেহমানদেরকেও বাসার ভেতর ধূমপান করতে দেওয়া হয় না। ধুমপান মস্তিষ্কের কোষগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয় এবং শরীরের জ্বীন ও ডিএনএ কে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মজার বিষয় হচ্ছে দুনিয়ার যত বড় বড় তামাক কোম্পানি সেগুলোর মালিক ইহুদীরা। তারা নিজেদের দেশে ও নিজেদের ঘরে ধূমপানকে নাজায়েজ করে রেখে বাকি পৃথিবীতে তামাকের সাপ্লাই দিয়ে যাচ্ছে। কি চমৎকার কূটকৌশল।
একজন ইহুদী নারীর গর্ভকাল ছয়মাস পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে প্রতিদিন একজন নার্স এসে কিভাবে বাচ্চাকে বড় করতে হবে, কিভাবে তাকে কোলে নিতে হবে, দুধ খাওয়াতে হবে, পরিষ্কার করতে হবে এসব বিষয়ে মাকে শিখিয়ে দেন। বাচ্চা জন্মের পর ইহুদী নারীদের একমাত্র কাজ নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রেখে বাচ্চার যত্ন নেয়া আর বেশি করে খাবার খাওয়া যেন বাচ্চার দুধের কোনো ঘাটতি না পরে। প্রতিদিন ধর্মীয় মিউজিকের মাধ্যমে বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো এবং বাচ্চা যেন বেশি বেশি ঘুমাতে পারে সেদিকে লক্ষ রাখেন নার্সেরা। বাচ্চা একটু বড় হলে হাড়ি-পাতিল, গাড়ি, বন্দুক কিংবা মোবাইল ফোন ধরিয়ে না দিয়ে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রকৃতির কাছে।
তাদের হাতে রঙ ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে ও রঙ করতে উৎসাহিত করা হয়। এমনকি বাচ্চারা কি খাবে এবং কি খাবে না সে ব্যাপারেও ইহুদী বাবা-মায়েরা খুব খুতখুতে। বাচ্চাদের খেয়াল খুশি মত তাদের হাতে চকলেট বা আইস্ক্রিম ধরিয়ে দেওয়া হয় না। বরং পুষ্টিকর ফল, রুটি, মাছ ও কডলিভারের তেল খাওয়ার ব্যাপারে তাদেরকে অভ্যস্ত করা হয়। তিন বছর বয়স থেকে ইহুদী শিশুদেরকে লিঙ্গ সম্বন্ধীয় জ্ঞান, পোষাক পরিচ্ছদের জ্ঞান এবং কথা বলার আদব কায়দা শেখানো হয়। খাবার টেবিলের ম্যানারিজম, নিজের হাতে তুলে খাওয়ার অভ্যাস এই সময় থেকেই শেখানো হয়।
সাত বছর বয়স থেকে তাদেরকে নিজের কাজগুলো বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আর পড়াশোনার জন্য দশ বছর বয়স পর্যন্ত কোনো ধরনের চাপ না দিয়ে নিজের মত করে জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয়। এসময় কার্টুন না দেখিয়ে বরং তাকে দেখানো হয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সকল বিষয়। পড়ানো হয় ভূগোল আর ধর্মীয় শাস্ত্র। ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস সিক্স পর্যন্ত ইহুদী শিশুদেরকে বিশেষ করে গণিত আর ব্যবসা শিক্ষা পড়ানো হয়। উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান শিক্ষার উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। এসময় তারা বিভিন্ন জিনিস তৈরীর চেষ্টা করে থাকে। এর মধ্যে সব ধরনের প্রজেক্ট থাকে। যদিও তাদের বানানো কিছু কিছু জিনিস অনেক সময় হাস্যকর ও ব্যবহারের অযোগ্য মনে হতে পারে। তথাপি এসবের মধ্য দিয়ে তারা ধীরে ধীরে ক্রিয়েটিভ হয়ে উঠে।
ইহুদী বাচ্চাদের মেধাভিত্তিক বিকাশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তাদেরকে ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দেয়া হয়। বিভিন্ন ধর্মের মনীষীদের জীবনী থেকে অনুপ্রেরণা মূলক গল্প তাদেরকে বলা হয়। বিশেষ করে ইহুদী ধর্মে যেসব নবী-রাসুলের উল্লেখ রয়েছে তাদের জীবনী শুনিয়ে শিশুদের নৈতিক বিকাশে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
ইহুদীদের আমরা যতই অপছন্দ করি বা শত্রু মনে করি না কেন এই ব্যাপারটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই যে তারা পৃথিবীতে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য যতটা সচেষ্ট ও মরিয়া আমরা তার ধারে কারেও নেই। আর বাস্তবতা হচ্ছে তাদের এই প্রচেষ্টার ফল এই যে ২য় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত যে ইহুদীরা ছিল সারা পৃথিবীতে অনাশ্রিত, নির্যাতিত ও লাঞ্ছিত। বর্তমানে তারাই সারা পৃথিবীর নিয়ন্ত্রক। তাদের এই রাতারাতি পরিবর্তন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আছে অনেক কিছুই।