একজন মানুষের কি কি দক্ষতা থাকা প্রয়োজন?- জীবনে চলার পথে আমরা নানা সমস্যার সম্মুখীন হই। এই সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা থাকা একান্ত প্রয়োজন। স্কিল বা দক্ষতা হলো কোনো বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান অর্জন করা। তেমনই কিছু স্কিল নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন যা আপনাকে জানতে হবে।
১। বেসিক কম্পিউটার
বেসিক কম্পিউটার কেন প্রয়োজন বর্তমান বিশ্ব কম্পিউটার নির্ভরশীল। স্কুল, কলেজ, অফিস, শপিংমল এমনকি বাসা-বাড়িতেও এখন পার্সোনাল কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রতিটি কর্মক্ষেত্র এখন কম্পিউটার নির্ভরশীল। চাকুরীর বাজারে কম্পিউটার অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনি শূণ্য। শুধু চাকুরীর বাজারেই নয় কম্পিউটার অভিজ্ঞতা ছাড়া আপনি জীবন যুদ্ধেও শূণ্য। যেকোনো ছোট খাটো প্রয়োজনে আপনাকে কম্পিউটারের দোকানের দ্বারস্থ হতে হবে। আপনার সিভিটাও অন্য কাউকে দিয়ে টাইপ করাতে হবে। আর যদি আপনি কম্পিউটার চালাতে জানেন তাহলে আপনার সিভি আপনি নিজেই খুব সহজে তৈরী করে নিতে পারবেন। এছাড়াও আরো অনেক কাজ আপনার জন্য একদম সহজ হয়ে যাবে।
এজন্য আমাদের সকলের বেসিক কম্পিউটার সম্পর্কে ধারনা থাকা উচিত।
বেসিক কম্পিউটারের যে বিষয়ে দক্ষতা থাকা উচিত।
ক। কম্পিউটার সম্পর্কে ধারনা।
খ। টাইপিং।
গ। মাইক্রোসফট ওয়ার্ড।
ঘ। মাইক্রোসফট এক্সেল।
ঙ। মাইক্রোসফট পাওয়ারপয়েন্ট।
২। ইংরেজি
বিশ্বের সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ভাষা গুলোর মধ্যে ইংরেজি অন্যতম। মাতৃভাষা দিয়ে আপনি যেমন আপনার ভাষার লোকেদের সাথে সহযেই কথা বলতে পারেন, ঠিক তেমনি বিশ্বজুড়ে যে কোনো প্রান্তের মানুষের সাথে কথপোকথনের জন্য আপনার ইংরেজি ভাষা জানা প্রয়োজন। কারণ এই ভাষাটির বিস্তার বিশ্বজুড়ে।
কর্মক্ষেত্রে নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা-তেও দক্ষতা প্রয়োজন। আপনি যদি সাবলীলভাবে ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন, লিখতে পারেন, বুঝতে পারেন তাহলে কর্মক্ষেত্রেও একাধিক সুযোগ খুলে যাবে আপনার জন্য।
ফ্রিল্যান্সিং দ্রুত হারে বাড়ছে। অনলাইন ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যেমন আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মের ক্লায়েন্টগুলি সারা বিশ্ব থেকে আসে এবং এ জাতীয় প্ল্যাটফর্মে যোগাযোগের জন্য ইংরেজি ভাষা জানা দরকার।
শুধু তাই নয়,আপনি কি বিদেশে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখেন? হার্ভার্ড, ইয়েল, প্রিন্সটন, ক্যামব্রিজ বা অক্সফোর্ডে আবেদনের কথা ভেবেছেন। যদি আপনি বিশ্বের নামকরা এইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে কোর্স করতে চান তাহলে আপনাকে ইংরেজি ভাষা রপ্ত করতে হবে।
৩। প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রত্যেকটি মানুষেরই প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পর্কে সাধারণ ধারণা থাকা উচিত। কেননা আমরা যেকোনো সময় যেকোনো দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারি। এমনকি আমাদের পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, সহকর্মীও দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। এমন অবস্থায় কি করা উচিত আর কি করা উচিত নয় সে সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। এমন সময় একটি ভুল সিদ্ধান্তে ভুক্তভোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তেমনি একটি সঠিক সিদ্ধান্ত ভুক্তভোগীর জীবন বাচাতে সাহায্য করে।
এজন্য আমাদের সকলেরই প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে সাধারণ জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক।
৪। কমিউনিকেশন স্কিল
কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা হলো অন্যের দেওয়া তথ্য সঠিকভাবে বুঝতে পারা এবং নিজে যা বলতে চাই তা অন্যকে সঠিকভাবে বুঝাতে পারা। আমাদের দেশে যোগাযোগ দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উন্নত দেশের মতো ততটা জোর দেওয়া হয় না। অথচ শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী কিংবা ব্যবসায়ী সবাইকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রয়োজন যোগাযোগ দক্ষতা। আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে অনেক মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হবে। নিজে নিজে বেশিদূর যাওয়া যায় না। যোগাযোগের গুরুত্ব বেশি অনুভূত হয় যখন প্রয়োজনীয় তথ্য যথাসময়ে পাওয়া যায় না। যোগাযোগ দক্ষতার উপকারিতা অনেক। বর্তমান সময়ে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ো যেকোনো বয়সের শিক্ষার্থীর জন্য যোগাযোগ দক্ষতা গড়ে তুলা অত্যন্ত আবশ্যক।
এখনকার ছেলেমেয়েরা মানুষের সাথে মিশতে জানে না। Introvert বা অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্বের মানুষ এমনটা বেশি করে। অথচ একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের সাথে মেশা বা যোগাযোগ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা দক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করুন। তাদেরকে বুঝার চেষ্টা করুন। কে বলতে পারে এদের মধ্যে কেউ না কেউ ভবিষ্যতে আপনার উপকারে আসতে পারে যা আপনি প্রত্যাশাই করেন নি। সুতরাং সম্পর্কের উন্নয়ন, কাজের দক্ষতাসহ নিজের যোগ্যতা বাড়ানোর পূর্ব শর্ত হলো যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করা।
৫। মানি ম্যানেজমেন্ট
মানি ম্যানেজমেন্ট হলো আপনি আপনার টাকাকে কিভাবে খরচ করবেন; কোন কোন খাতে খরচ করবেন; এই খরচ কি আপনার জন্য প্রয়োজন নাকি বিলাসিতা; খরচ কমিয়ে কিভাবে ইনভেস্ট করবেন; ভবিষ্যতের জন্য কি পরিমাণ সঞ্চয় করবেন ইত্যাদি সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞান।
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় মানি ম্যানেজমেন্ট শেখানো হয় না। যদিও প্রত্যেকটি ছেলেমেয়েরই মানি ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই সঠিক ধারনা থাকা উচিত। যেন বড় হয়ে টাকা পয়সার ব্যাপারে সচেতন হতে পারে।
কেউ কেউ দেখবেন অধিক বেতনের চাকুরী করেও স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যর্থ হয়। সর্বদা ঋণের বোঝা বইতে থাকে।
আবার দেখবেন কেউ কেউ অল্প বেতনের চাকুরী করেও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করছে। কিভাবে সম্ভব হয়েছে.?
এখানে ২য় ব্যক্তির মানি ম্যানেজমেন্ট জ্ঞান ১ম ব্যক্তির চেয়ে অনেক উন্নত। যার ফলে সম্ভব হয়েছে।
৬। ফটো/ভিডিও এডিটিং
আমাদের সকলেরই প্রফেশনালি না হলেও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিন্তু ফটো বা ভিডিও এডিটিং এর প্রয়োজন হয়। যেমন আপনি কোথাও ঘুরতে গেছেন সেখানে তুলা আপনার ছবি বা ভিডিও এডিটের প্রয়োজন হয়। আমরা সকলেই বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে থাকি। এসব সোশ্যাল মিডিয়ার প্রোফাইল পিকচার এডিটের প্রয়োজন পড়ে। বিয়ে বা কোনো অনুষ্ঠানের তোলা ছবি বা ভিডিও এডিটের প্রয়োজন হয়। আপনি যদি এডিটিং না জানেন তাহলে কিন্তু আপনাকে আপনার বন্ধুর পেছনে পেছনে ঘুরতে হবে যে কিনা এডিটিং জানে নয়তো আপনাকে কোনো ফটোশপে যেতে হবে।
কিন্তু আপনার যদি এই এডিটিং স্কিল জানা থাকে তাহলে কিন্তু আপনি আপনার মোবাইল বা কম্পিউটার দিয়ে খুব সহজেই এই এডিটিং এর কাজটা করে ফেলতে পারবেন।
৭। বেসিক ইলেক্ট্রিক্যাল
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অফিস হতে বাসাবাড়ি সর্ব ক্ষেত্রেই আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকি। জীবনের প্রয়োজনে আমরা অসংখ্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকি। প্রায়শই আমাদের বিভিন্ন ছোটখাটো বৈদ্যুতিক সমস্যা দেখা দেয় যা কিনা সহজেই সমাধা করা যায় যদি ইলেক্ট্রিক সম্পর্কে বেসিক ধারনা থাকে। নয়তো আপনাকে এই সামান্য কাজের জন্যও একজন ইলেক্ট্রিশিয়ানের প্রয়োজন হবে এবং সার্ভিস চার্জ পে করতে হবে।
এজন্য আমাদের সকলেরই ইলেক্ট্রিক্যাল সম্পর্কে বেসিক ধারনা থাকা উচিত যাতে আমরা ছোটখাটো সমস্যা গুলো নিজেরাই সমাধান করতে পারি।
৮। সাতার
সাতার একটি অত্যাবশ্যকীয় স্কিল যা আপনাকে জানতেই হবে। জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে আপনার এই সাতারের প্রয়োজন পরবে। এমনকি আপনার জীবন বাচাতেও এটি ভুমিকা রাখতে পারে। বিভিন্ন চাকুরীর ক্ষেত্রে সাতার জানা অত্যাবশ্যক যেমন-সামরিক বাহিনী। সাতার না জানা থাকলে আপনি এসব চাকুরীর আবেদন করতে পারবেন না। নৌকায় করে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে আপনার জীবন বেচে যেতে পারে যদি আপনি সাতার যেনে থাকেন।
এজন্য আমাদের প্রত্যেকেরই সাতার জানা উচিত।
৯। রান্না
যদি আপনি নারী হন তবে আপনার অবশ্যই রান্না জানা উচিত। আপনি যত শিক্ষিতই হোন বা যে পেশাই থাকেন না কেন অন্তত বাঙালী নারী হিসেবে আপনার রান্না জানা উচিত। আর যদি আপনি পুরুষ হোন তবুও আপনার রান্না জানা উচিত। কেননা বিভিন্ন সময় আমাদের রান্না করার প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন বাড়িতে আপনার মা অথবা স্ত্রী যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং বাড়িতে রান্না করার মতো অন্য কোনো মহিলা না থেকে থাকে তখন কিন্তু আপনার রান্না করার প্রয়োজন হতে পারে। টুকিটাকি রান্না যদি আপনি জেনে থাকেন তাহলে কিন্তু তখন তা কাজে দিবে।
উপরোক্ত স্কিল গুলিতে আপনি যদি দক্ষতা অর্জন করেন তাহলে আপনার জীবনের পথ চলা অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে যা আপনাকে সামনে এগিয়ে যেতে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।